ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহজাদ’পুর উপজেলার মাে: সাইদুল ইমলাম (২৬) নামের এক যুবক বি’না চিকিৎসায় মৃত্যু’বরণ করেছে। শনিবার (১৬ জানুয়ারী) ভােরে তার লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছায়।এলাকাবাসী জানায়, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া পাড়িজমায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদ’পুর উপজেলা খুকনী নতুন পাড়া গ্রামের জিল’হজ মন্ডলে’র নাতি ও মােঃ আব্দুল আউয়ালের ছেলে সাইদুল মাে: ইসলাম (২৬)। পিতা-মাতার ৩ সন্তানের মধ্যে সে ছিল বড় সন্তান এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি।
সাইদুল মালয়েশিয়ার মনিপুরা সিটির তােজোর্টিয় ইম্পিয়ান বিলাস মনােফ কিয়ারা নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাইদুল ১লা জানুয়ারি অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের কারণে অসুস্থ বােধ করে। চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অফিসে ছুটি চাইলেও সে ছুটি পায়নি। পরে অসুস্থ শরীর নিয়েই কয়েক দিন কাজ করে। অসুস্থতা বেশি হলে সাইদুল ইমলাম বাড়িতে আসার জন্য তার বাবার কাছে টাকা চায় এবং অসুস্থ’তার কারণে কান্না”কাটি করে, পরে সাইদুলের পিতা তাকে ৬০ হাজার টাকা পাঠায়।
আরও পড়ুনঃ প্রবাসী কর্মীদের যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ!
সে ৬ জানুয়া’রী সকালে ছুটি চেয়েও না পেয়ে কাজ বাদ দিয়ে দেশে আশার জন্য টিকেট কাটতে যান এবং ১৩ তারিখের বিমানের টিকেট কাটেন। তারপর কোম্পানীর লােকজন আর তাকে কর্মস্থলে প্রবেশ করতে দেয়নি। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী’র দোকানীর আশ্রয় নেয় সাইদুল ইমলাম । একটি ঘরে একা থাকা অবস্থায় ৮ জানুয়ারী সাইদুল বেশি অসুস্থতা বােধ করলে তার পরিচিত প্রবাসী সহ’কর্মীদের কাছে। | ফোন করে সাহায্য চায়। বাংলাদে’শি সহ’কর্মীরা তাকে সাহায্য করতে চাইলেও তাদের কর্মরত প্রতিষ্ঠান কাউকে তার সাহায্যে আসতে দেয়নি।
পরিবার থেকে অভিযােগ করা হয়, তাদের প্রতিষ্ঠানটি থেকে জানিয়েছিল যে ব্যক্তি কাজ বাদ দিয়ে তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে তাকেই চাকরিচ্যুত করা হবে।
সাইদুলের পিতা আব্দুল আউয়াল জানান, সাইদুল কোথাও সাহায্য না পেয়ে আমার সাথে কথা বলে কান্নাকাটি করে সাহায্যের জন্য লােক পাঠাতে বলে। পরে বিনা চিকিৎসায় ৯ জানুয়ারী সকালে সাইদুল মৃত্যুর কোলে ঢােলে পরে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিত্তরা জানায় সে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে।
উল্লেখ্য, সুদুর মালায়েশিয়া থেকে বাবাকে ফোন করে বলে, বাবা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে কেউ যদি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতাে তাহলে আমি সুস্থ হয়ে যেতাম , মৃত্যুর আগে বাবা মাকে ইমােতে অসংখ্য ভয়েস বার্তা পাঠায়, ফোন করে বলে আমাকে টাকা পাঠাও আমি বাংলাদেশে যাবাে।।শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ভােরে গ্রামের বাড়িতে সাইদুলের লাশ এসে পৌছালে এলাকাজুড়ে শােকের ছায়া নেমে আসে। বাবা-মায়ের ও স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে যায় ।
তারা আকুতি করে জানান, আমাদের সন্তানের মতাে যেন কারাে সন্তান বিনা চিকিৎসায় প্রবাসে মারা না যায়। মালয়েশিয়াতে আত্মীয়-স্বজন থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির চাকুরী হারানাের ভয়ে কেউ কাছে আসতে পারেনি। তার এরকম নির্মম মৃত্যুর খবরে এলাকার জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার লােকজন জানিয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রচুর টাকার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠায়, কিন্তু সরকারিভাবে তাদের নিরাপত্তা ও সুযােগ-সুবিধার জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। তারা দ্রুত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযােগিতার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।
আপনার মতামত জানান